আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তি চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের ল্যাবে হয়েছিল কিনা সেটি জানতে তদন্ত শুরু করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারা। তবে এই ভাইরাসটি উহানের সামুদ্রিক খাবারের বাজারের পরিবর্তে ল্যাব থেকেই ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মার্কিন কর্মকর্তারা।
চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে শুরু হওয়া মহামারিতে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। বেশ কিছু তত্ত্বকে সামনে রেখে করোনাভাইরাসের উৎস খোঁজার কাজ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। কর্মকর্তারা বলেছেন, তদন্তকারী গোয়েন্দা সম্প্রদায় ভাইরাসটির উৎপত্তি সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন তত্ত্বের ভিত্তিতে কাজ করছেন।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা-সহ কংগ্রেসের রিপাবলিকান দলীয় কিছু সদস্য ভাইরাসটি চীনের ল্যাব থেকেই ছড়িয়েছে বলে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সামনে এনেছেন। মার্কিন সরকারের এই তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, চীনের উহানের ল্যাব থেকে দুর্ঘটনাক্রমে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে; এমন একটি তত্ত্বের ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দারা তদন্ত করছেন।
মার্কিন গোয়েন্দারা এখনও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। তবে অন্য সূত্রগুলো বলছে, অতি সতর্কতা অবলম্বন না করায় অথবা দুর্ঘটনাবশত উহানের ল্যাবে এই ভাইরাসের সংস্পর্শে এসে হয়তো কেউ প্রথম সংক্রমিত হয়েছিলেন। পরে তার মাধ্যমে এই ভাইরাস অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।
এই ভাইরাস নিয়ে স্পর্শকাতর গোয়েন্দা তথ্যগুলো সংগ্রহ করছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। তবে গোয়েন্দাদের অনেকেই বলছেন, এই ভাইরাসের উৎপত্তির আসল কারণটি হয়তো কখনই জানা যাবে না।
চলতি সপ্তাহে মার্কিন জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ চেয়ারম্যান মার্ক মিলি করোনাভাইরাস ল্যাব থেকে উৎপত্তি হয়েছে কিনা সেটি জানতে গোয়েন্দারা কঠোর পরিশ্রম করছেন বলে জানান। তিনি বলেন, আমি এই মুহূর্তে শুধু এটুকু বলব যে, এই ভাইরাসটি প্রাকৃতিকভাবে উৎপত্তি হয়েছে, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা নিশ্চিতভাবে জানিও না।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসটির আগ্রাসী সংক্রমণের ব্যাপারে গোয়েন্দারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন বলে বুধবার জানান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে গোয়েন্দারা কি ধরনের তথ্য পেয়েছেন সেব্যাপারে কোনো তথ্য জানাতে অস্বীকার করেছেন তিনি।
তবে ল্যাব থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার যে গুঞ্জন রয়েছে; সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে চীন সরকার। এমনিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরাও ল্যাব থেকে ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়ার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নাকচ করে দিয়েছেন।
এদিকে, হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের একটি সূত্র সতর্ক করে দিয়েছে বলেছে যে, ভাইরাস বা অন্য কোনো প্যাথোজেনের কারণে সৃষ্ট প্রত্যেক মহামারির সময়ও এ ধরনের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট বেশ কিছু সূত্রের বরাত দিয়ে চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি বায়োল্যাব থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছিল। ওই সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও চীন থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসকে ‘উহান ভাইরাস’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তিনিও উহানের ল্যাব থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়ার তত্ত্বকে অস্বীকার করেননি।
গত সপ্তাহে মাইক পম্পেও বলেন, একেবারে শুরুর দিকে আমরা এই ভাইরাসটির ব্যাপারে জানতে উহানে যেতে চাইলেও চীনের কমিউনিস্ট পার্টি অনুমতি দেয়নি। তারপরই আমরা জানতে পাই, সেখানে এই ল্যাব আছে। আমরা জানতে পারি, উহানে সামুদ্রিক খাবার বিক্রির বাজার আছে। আমরা জানি ভাইরাসটি উহান থেকেই উৎপত্তি হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আমরা এখনও অনেক কিছুই জানি না। আমাদের বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব দরকার।
মার্কিন কিছু কর্মকর্তা বলেছেন, চীনকে একটি কড়া মূল্য গুণতে হবে। তবে তার আগে যুক্তরাষ্ট্র এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়। এছাড়া ভাইরাসটির উৎপত্তির ব্যাপারে এখনও আরো অনেক তথ্য প্রয়োজন; যা গোয়েন্দারা সংগ্রহ করছেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।